Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য সেক্টরের অবদান

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য সেক্টরের অবদান
মোঃ মাসুদ রানা (পলাশ)
বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্য সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, আমাদের খাদ্যের প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। দেশের জিডিপির ৩.৫৭ শতাংশ ও কৃষিজ জিডিপির ২৬.৫০ শতাংশ এবং মোট রপ্তানি আয়ের ১.২৪ শতাংশ মৎস্য খাতের অবদান (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২)। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যা  গত কয়েক বছরের উৎপাদনের প্রায় ছয় গুণ। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে যার নামকরণ হবে “স্মার্ট বাংলাদেশ”। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে দেশের শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, গবেষণা ও প্রকৌশলসহ সকল খাতকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর করা। কৃষির উপসেক্টর মৎস্য খাতকে স্মার্ট  পদ্ধতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকারত্ব দূরীকরণ, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অল্প পুঁজিতে অধিক লভ্যাংশ অর্জনসহ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভবপর হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য সেক্টরের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করা হলো-
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার : মৎস্য চাষে পানির পিএইচ, অ্যামোনিয়া, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেনসহ অন্যান্য নিয়ামকসমূহ স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন নিয়ামকগুলোর সেন্সর পুকুরে থাকবে যেখান থেকে নিয়মিত তথ্য মোবাইল অ্যাপস এ আসবে যা দেখে খামারি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ামকগুলোর মান নির্ধারিত মাত্রার থেকে কমবেশি হলে স¥ার্ট টেকনোলজির মাধ্যমে ঘরে বসেও সমাধান করা সম্ভব যা মাছকে  রোগজীবাণু থেকে নিরাপদ রাখবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। ফিস ফিডার ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা সম্ভব, এমনকি এই টেকনোলজি ব্যবহার করে ঘরে বসেও মাছের খাবার দেওয়া সম্ভব, যা খাবারের অপচয় রোধ করবে এবং মাছের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে খামারিকে কাক্সিক্ষত উৎপাদন পেতে সহায়তা করবে। ইমেজ প্রসেসিং টেকনোলজির মাধ্যমে পুকুরের বিভিন্ন স্তরের মাছের ছবি সংগ্রহ করা যায়, যা সরাসরি মোবাইল অ্যাপস বা সফটওয়ারে সন্নিবেশিত হয়, যা সফটওয়ারের মাধ্যমে বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাছের বিস্তৃতি, দৈহিক বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করে।
মাছ বাজারজাতকরণ টেকনোলজির ব্যবহার (স্মার্ট ফিস মার্কেটিং) : মাছের বাজারব্যবস্থায় গুচ্ছ আকারে মধ্যস্বত্বাভোগী থাকার কারণে মাছ চাষিরা তাদের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় এমনকি চাষিরা চাইলেই অনান্য পন্যের মতো মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারে না। খামারিরা যে দামে মাছ বিক্রি করে ভোক্তা তার প্রায় দ্বিগুণ দামে মাছ ক্রয় করে, পুরো টাকাটা চলে যায় মধ্যস্বত্বাভোগীদের পকেটে, ফলশ্রুতিতে খামারি ও ভোক্তা দুই পক্ষই লোকসান গুনছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবায়িত ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে আমরা আজ অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেমে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মাছ কেনাবেচার ক্ষেত্রে স্মার্ট ফিস মার্কেটিং  সিস্টেম এখন সময়ের দাবি। স্মার্ট ফিস মার্কেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে খামারিরা তাদের উৎপাদিত মাছ কোন আড়তে দাম কেমন তা খামারে বসে থেকে মোবাইল অ্যাপসের  সহায়তায় জানতে পারবে এবং যেখানে বাজারমূল্য বেশি সেখানে বাজারজাত করে অধিক লাভ করতে পারবে।
মৎস্য আহরণ জাহাজ ও জেলেদের সুরক্ষায় স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার : বঙ্গোপসাগরে যে ট্রলারগুলো বা জাহাজগুলো মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয় তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান, মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র খুঁজে পেতে সহায়তা প্রদান, ঝড়ে বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে কোন জেলে মারা গেলে বা নিখোঁজ হলে তার লাশ খুঁজে পেতে স্মার্ট টেকনোলজি রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা। এক্ষেত্রে জেলেদের হাতে ঘড়ির মতো ডিভাইস থাকবে যা পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফলশ্রুতিতে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ বা জেলেকে খুব সহজেই খুঁজে বের করা যাবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেমের সহায়তায় জেলেরা খুব সহজেই মৎস্য আহরণ ক্ষেত্রসমূহ খুঁজে পাবে এবং মাছ ধরা শেষে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে। সমুদ্রের পানি যেহেতু স্বচ্ছ তাই ইমেজ প্রসেসিং টেকনোলজি ব্যবহার করে জেলেরা ট্রলার থেকে মাছের ঝাঁকের গতিবিধি লক্ষ করতে পারবে, রাডার, সোনার ব্যবহার করেও মাছের ঝাঁকের অবস্থান, পরিধি ও দূরত্ব নিরূপণ করা যায় ফলে জেলেরা স্মার্ট টেকনোলজির সহায়তায় অল্প সময়ে অধিক মাছ আহরণ করতে পারবে যা তাদের উপার্জন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে।
মৎস্য সেবা ত্বরান্বিতকরণ ও মাছচাষিদের প্রশিক্ষণে স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার : মাছ চাষিরা তাদের চাষ শুরু থেকে শেষ অবধি নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন যেগুলো তৎক্ষণাৎ সমাধানে ব্যর্থ হলে লোকসানের শিকার হতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের সহায়তায় মাছচাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান মৎস্য অফিসার বা মৎস্য বিশেষজ্ঞগণ এখন ঘরে বসেই দিতে পারেন। মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন মাছ চাষিদের অনলাইনভিত্তিক সেবা দিয়ে আসছে, যেমন বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল নামক একটি সংগঠন ২০১৬ সাল থেকে মাছচাষিদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে চলেছে, তারা তাদের কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন এলাকায় সার্ভিস বুথ চালু করেছে। দেশ ডিজিটাল হওয়ার সুবাদে খামারিরা এখন যেকোন সমস্যা তড়িত সমাধান পাচ্ছে, যা তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অধিক মুনাফা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দেশ স্মার্ট হলে  মৎস্য অধিদপ্তরের দূরপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন আরও বেগবান হবে ফলে দেশে  মৎস্য সেক্টরে তৈরি হবে অসংখ্য জনবল যা দরিদ্রতা দূরীকরণ, বেকারত্ব দূরীকরণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার : ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, যা এখনো অবদি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার উপর। মৎস্য অধিদপ্তরের সঠিক ব্যবস্থাপনায় গত কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন গাণিতিক হারে বেড়েছে। ইলিশ ব্যবস্থাপনা বলতে মূলত প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও জাটকা ও মা ইলিশের চলাচলের পথ সচল রাখা, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা ও অনান্য কর্মকা-। আমরা যদি প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে পরিপূর্ণ ডিম ছাড়তে দেওয়া ও জাটকা ধরা বন্ধ করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আমরা নদীতে কোথায় মা ইলিশ বা জাটকা আহরণ করা হচ্ছে তা শনাক্ত করা সহজতর হবে এবং তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও মাইক্রো বা ন্যানো চিপ টেকনোলজি ব্যবহার করে ইলিশ সমুদ্র থেকে নদী ও নদী থেকে সমুদ্রে আসা যাওয়ার পথ নিরূপণ করা যাবে। সুতরাং স্মার্ট টেকনোলজির মাধ্যমে মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ করা ও দেশের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হবে।
মৎস্য সেক্টরের গবেষণায় স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার : মৎস্য সেক্টরের নানাবিধ গবেষণা যেমন ফিস পপুলেশন ডিনামিক্স, স্টক এসেসমেন্ট, মাইগ্রেটরি পথ চিহ্নিতকরণসহ অনান্য কাজে মাইক্রো বা ন্যানো চিপ ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার গবেষণা ভিত্তিক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে গবেষণাকে বেগবান করা সম্ভব। অঁঃড়হড়সড়ঁং টহফবৎধিঃবৎ ঠবযরপষবং  ব্যবহার করে গবেষকরা সমুদ্রের গভীরে বিভিন্ন মাছের পপুলেশন, পানির বিভিন্ন প্যারামিটার ও অন্যান্য তথ্যাদি খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারবে, যা সমুদ্রে কোন অঞ্চলে মাছের প্রাপ্যতা কেমন, কোন এলাকায় কি মাছের আধিক্য বেশি তা স্পষ্ট তথ্য পাওয়া সম্ভব ফলশ্রুতিতে সমুদ্রে নতুন ফিশিং গ্রাউন্ড খুঁজতে যন্ত্রটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্তির পথে  তাদের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক ট্যাগ ব্যবহার করে সমুদ্রের কোন অঞ্চলে এসব প্রাণি ব্রিডিং ও নার্সিং করে থাকে তা  খুব সহজেই নির্ধারণ করা ও ঐ এলাকাগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
আমাদের রয়েছে ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সুবিশাল সমুদ্র সম্পদ যেখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা ও আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মৎস্য ভা-ার যার খুব অল্প পরিমাণ আমরা আহরণ করতে পারি কারণ গভীর সমুদ্রের সকল স্তর থেকে মাছ আহরণ করার মতো  ট্রলার আমাদের নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমুদ্রে মাছ চাষ করা হয় কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়া ৫০ বছর অতিক্রম করলেও আমরা সমুদ্র মাছ চাষের চিন্তা করতে পারিনি। আমাদের এই সুবিশাল সমুদ্র তথা ব্লু ইকোনমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সমুদ্রে মাছ চাষ বা মেরিকালচার করা জরুরি যা আমাদের দেশের মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে বিশে^ মাছ উৎপাদনে ১ম বা ২য় স্থান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট টেকনোলজির মাধ্যমে আমরা সমুদ্রে মাছ চাষ করে দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারব।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হার্ভেস্ট, টেকনোলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, শেরেবাংলানগর, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল : ০১৭৪৫৬২৬১৫৩, ই-মেইল : ranadof.bd@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon